Monday, October 16, 2017
অনার্স ভর্তি নিয়ে বিপাকে চান্দিনার শিক্ষার্থীরা
সাদেক হোসেন:
চলতি বছরের ২৩ জুলাই প্রকাশিত হয় এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল। বিগত বছরের তুলনায় এ বছরের কুমিল্লা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বেশ বিপর্যয় নেমে আসে। কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার কম হলেও জেলার অন্যান্য উপজেলার তুলনায় ভয়াবহ খারাপ ফলাফল করে চান্দিনার শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় রাজনৈতিক ইস্যু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতিবাজদের লুটতরাজ, ক্লাসে শিক্ষকদের অমনযোগিতা, কেবলমাত্র প্রাইভেট শিক্ষকদের উপর ভরসা এবং সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের বেখেয়ালসহ বেশ কয়েকটি কারণকে খারাপ ফলাফলের জন্য দায়ী করেন সংশ্লিষ্ট অভীজ্ঞ মহল।
পরবর্তীতে মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে নিজেদের ভর্তি নিয়ে বেশ দু:শ্চিন্তায় পড়ে যান শিক্ষার্থীরা। এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার অর্জিত মোট পয়েন্ট যোগ করে দেখেন আবেদনের ন্যূনতম পয়েন্টও তাদের নেই। তাই অনেকেই ছিটকে পড়েন আবেদনপত্র উত্তোলণ এবং ভর্তি যুদ্ধের প্রতিযোগিতা থেকে। আবার কেউ কেউ আবেদনের ন্যূনতম পয়েন্ট নিয়ে আবেদন করলেও পয়েন্টভেদে তাদের অর্জিত নম্বরের বিশাল ব্যবধান থাকায় পরীক্ষা দেওয়া হয়নি পছন্দের সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সবশেষে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ভর্তি পরীক্ষায়ও ১ম মেধাতালিকায় স্থান হয়নি চান্দিনার অধিকাংশ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। ২য় মেধাতালিকার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। এ নিয়ে বেশ হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তাদের অভিভাবকরা।
ছেলেমেয়েদের খারাপ ফলাফলের কারণে তারা ভর্তি হতে পারছে না তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজে-এর জন্য মূলত দায়ী কারা?-এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকেই জানান, বিগত বছরগুলোতে চান্দিনার শিক্ষা ব্যবস্থার মান এতটা নি¤œ ছিল না, যেটা দৃশ্যত গত দু’এক বছর ধরে। রাজনৈতিক কারন আর ছেলে-মেয়েদের ফেসবুক আসক্তি খারাপ ফলাফলের জন্য দায়ী।
চান্দিনা মহিলা ও রেদোয়ান আহমেদ এ দুটি কলেজের গত ৫ বছরের পরীক্ষার ফলাফলের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সবথেকে ভয়াবহ খারাপ ফলাফল করেছে ২০১৭ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। এমনকি চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কেবলমাত্র ১জন পাস করার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। যা কেবল শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অবাকই করেনি, সচেতন মহলে সৃষ্টি করেছে এক ধরণের শঙ্কা।
আবুল কালাম নামে এক অভিভাবক জানান, চান্দিনার কলেজ দুটির শিক্ষার মান দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে। এমনভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে ভর্তির জন্য ভাল কোন শিক্ষার্থীই পাবে না কলেজ কর্তৃপক্ষ। সন্তানের ভাল ফলাফলের আশা নিয়েই ভর্তি করায় বাবা-মায়েরা। কলেজ দুটির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে রেজাল্ট খারাপ হলে, সবকিছু থেকেই পিছিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। সে বিষয়টি মাথায় নিয়ে আর কেউ এই কলেজ দুটিতে ভর্তি করাতে ইচ্ছা পোষণ করবে না।
জান্নাত কলি নামে এক শিক্ষার্থী জানান, খারাপ ফলাফলের জন্য অবশ্যই রাজনৈতিক কারণ দায়ী। তাছাড়াও রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষকদের উদাসীনতা আর অবহেলাও রয়েছে। যোগ্যদের বাদ রেখে কলেজগুলোতে সব দলীয় শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। যারফলে শিক্ষকরা নেতার পিছনেই সময় বেশি দেন। ক্লাসে মনোযোগী না হয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাদের নজর থাকে বেশি। শিক্ষকদের এই নেতা-প্রীতি মনোভাব থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থী-প্রীতিতে মনোযোগী হলে পড়ার মান আরো ভাল হবে বলে আমি আশাবাদী।
মেডিকেল পরীক্ষা দিতে না পারা এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক প্রতিবেদককে জানান, ‘ইচ্ছা ছিল মেয়েকে মেডিকেলে পড়াবো। সেটা আর হলো না। মেয়ের পরীক্ষা ভাল হয়েছে বলে তাকে আমি মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করাতে ঢাকায় পাঠাই। পরে যখন রেজাল্ট প্রকাশ হলো, তখন তো একরকম আকাশ থেকেই পড়লাম। একি রেজাল্টের হাল! ৩.৪০.. পরে তো আর মেডিকেল কোচিং করেনি মেয়ে, বাড়ি ফিরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ১ম মেধা তালিকায়ও চান্স পায়নি সে। এখন যে কী করবো, বুঝতে পারছি না।’
এদিকে পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্টের জন্য রাজনৈতিক কারণকে দোষারোপ না করে বরং শিক্ষার্থীদেরকেই দায়ী করলেন এক শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘ঠিক মতো ক্লাসে উপস্থিত থাকে না এখনকার ছেলে-মেয়েরা। বাড়ি থেকে কলেজের নাম করে বের হয়ে বাহিরে ঘুরে-ফিরে। বাবা-মায়েরা জানে তাদের সন্তানেরা কলেজে ক্লাস করছে। আর তাছাড়া এখনকার যুগ ফেসবুকের। সারাক্ষণ ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালবাসেন তারা। বইয়ের সাথে সর্ম্পক নেই তাদের, সারাক্ষণ ফেসবুকেই ডুবে থাকেন।’ এসময় বাবা-মায়ের আরো সচেতন হওয়ার জোর অনুরোধ জানান তিনি।
এইচএসসি পরীক্ষায় পয়েন্ট কম থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ভর্তি হতে পারবে না তাদের পছন্দের ভার্সিটি কিংবা কলেজসমূহে। আর সেজন্য তারা দায়ী করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষকে। দুই কলেজ কর্তৃপক্ষের অর্ন্তদ্বন্দ্বের কারণেই আজ শত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে। সামনের দিনগুলোতে যেন ছোট ভাই-বোনদের এমন পরিস্থিতির স্বীকার না হতে হয় সেই দিকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে খেয়াল দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।
উল্লেখ্য, এইচএসসি ২০১৭ পরীক্ষায় চান্দিনা মহিলা কলেজ থেকে ৩৮১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে কেবল ১৫৫ জন এবং রেদোয়ান কলেজ থেকে ২৪৯ জনের মধ্যে ৬১ জন শিক্ষার্থী পাস করে। মহিলা কলেজের পাসের হার ৪০.৬৮% এবং রেদোয়ান কলেজের পাসের হার মাত্র ২৪.৫০%। যা কলেজ দুটির বিগত ৫ বছরের ফলাফলের তুলনায় একেবারেই কম।
About Unknown
Soratemplates is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates.
চান্দিনা
Labels:
কুমিল্লা উত্তর,
চান্দিনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment